শেড কাকে বলে

 



শেড ( Shade): শেড বলতে বুঝায় কাপড়ে রঙের ঘনত্বের পরিমান। আমরা জানি দৈর্ঘ ও প্রস্থ বরাবর ইয়ার্ন দিয়ে উইভিং প্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম যে কাপড়টি তৈরি হয়, তাকে গ্রে কাপড় বলে। তারপর এটিকে ডাইংপ্রিন্টিং ও ফিনিশিং করে বাজারজাতের উপযোগী করে তোলা হয়।
কাপড় ডাইং করার পর যখন শুকানো হয় তখন শেড এর এই ভেরিয়েশন বা ভিন্নতা দৃষ্টিগোচর হয়। যদি আপনার ডাইং প্রক্রিয়ায় কোন রকম ত্রুটি থাকে তাহলে শেড এর বৈচিত্রতা লক্ষণীয় মাত্রায় ধরা পরে। যা টেক্সটাইল শিল্পের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত।
টেক্সটাইল মিল এর ডাইং করা কাপড়ের এক এক রোল বা এক এক পিস-এ যদি আপনি রঙের ঘনত্বের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন তাহলে তারতম্য শেড এর ভিন্নতা সহজেই ধরতে পারবেন। অথচ, এক টুকরা কাপড় অন্য টুকরা বা এক রোল এর কাপড় অপর রোল এর কাপড়ের সাথে জোড়া লাগিয়েই কিন্তু পোশাক বা গার্মেন্টস পণ্য তৈরি করা হয়।
যদি, সে ক্ষেত্রে একই পোশাকের বিভিন্ন অংশে যদি রঙের তারতম্য দেখা যায় – তাহলে ব্যাপারটি কেমন হয়, আপনিই বলুন। এজন্য কাপড় মেলানোর বেলায় কাপড়ের শেড পরীক্ষা করা খুবই গুরত্বপূর্ণ।

শেড কিভাবে চেক করবেন?: শেড ম্যাচিং এর বিষয়টি অনেক সময় ব্যক্তি মানুষের চোখের দৃষ্টি শক্তির উপর নির্ভর করে।  এই ভিজুয়াল পদ্ধতিগত কারণে কারোও চোখে শেড এর ঘনত্ব বেশী মনে হয় আবার কারোও চোখে কম।

তাই এই কাজের জন্য একজন ডাইং এক্সপার্ট প্রয়োজন যে সঠিকভাবে এটি নিরুপন করতে পারে। এছাড়া, কম্পিউটারে কালার ম্যাচিং সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমেও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে।
আর একটি কথা বলা দরকার, শেড চেকিং এর বিষয়টিকে আপনি এক প্রকাররে ফিজিক্যাল টেস্টিং পদ্ধতি হিসাবে ধরতে পারেন যার সাথে কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সিস্টেম জড়িত।

শেড চেকিং এ কি দরকার:কাপড়ের যে নমুনাটি পরীক্ষা করা হবে তার রঙের শেড আলোক উৎসের ‍উপর নির্ভর করে এক এক রকম হতে পারে। তাই বয়ার বা কাস্টোমার যে সেম্পলটি পরীক্ষা করা হবে তার সাথে তাল মিলিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোক উৎসের কথা বলে দেওয়া থাকে। যে আলো ব্যবহার করে এটিকে পরীক্ষা করা হবে।

যেমন Verivide light box, যার আলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিচে কয়েকটি আলোর উৎসের নাম বলা হলো-

কৃত্রিম দিনের আলো যেমন, 

TL-84

D-65

F বা ফিলামেন্ট

UV বা আলট্রাভায়োলেট, ইত্যাদি।


কাপড়ের শেড কখন কখন পরীক্ষা করা হয়?

কাপড়ে রঙের ঘনত্বেন পরিমান তার প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখা হয়। যাতে বাজারজাতকরণের পর কাস্টোমার এর নিকট পণ্যটি সন্তুষ্টিচিত্তে গৃহীত হয়। তাদের যাতে কোন অভিযোগ না থাকে।
কয়েকবার চেক করার পর যদি শেড এর ভেরিয়েশন পরিলক্ষীত হয় তাহলে তার সংশোধনের ব্যবস্থাও থাকে। তাই হতাসার কোন কারণ নেই। সংশোধিত পণ্যটিই ফিনিশ প্রোডাক্ট হিসাবে বাজারে ছাড়া হবে।


একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সুনির্দিষ্ট আলো প্রয়োগের মাধ্যমেই কিন্তু প্রতিবার চেক করতে হবে। কারণ, শেডিং নির্ণয়ে আলোর প্রভাব সম্পর্কে আপনি ইতোমধ্যে জেনেছেন।
যাহোক, সাধারণত: কাপড় উৎপাদনের নিম্নলিখিত পর্যায়ে আপনাকে শেডিং এর বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে হবে-

  • ডাইং এর পর
  • ড্রাইং বা শুকানোর পরে
  • ফিনিশিং এর ট্রায়ালের সময়
  • ফিনিশিং এর পর


কাপড়ের শেড দুর করার উপায় কি?:কাপড়ের বিভিন্ন অংশে রঙের বৈচিত্রতা একটি সাধারণ সমস্যা। সচারাচর ভাবে ডাইং এবং প্রিন্ট করা কাপড়ে এই ধরণের সমস্যার সুযোগ বেশী থাকে। গার্মেন্টস শিল্পে এই সমস্যযুক্ত কাপড় ত্রুটিযুক্ত কাপড় হিসাবে বিবেচিত।

তাই, শেড ভেরিয়েশন কিভাবে দুর করা যায় সে বিষয়ে আপনাকে সচেষ্ট হতে হবে।
এর জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানে একটি স্টেন্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা SOP থাকতে হবে। যা সকল স্টাফকে অনুসরণ করেই পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাজ করতে হবে।
যাহোক, শেড ভেরিয়েশন কিভাবে দুর করা যায় বা কমিয়ে আনা যায় তার উপর কয়েকটি টিপস নিচে উল্লেখ করা হলো-

ফেব্রিক ইন্সপেকশন: কাপড়ের রোল আপনি নিজে ডাইং করুন বা বাইরে থেকে যোগার করুন – উভয় ক্ষেত্রেই কাপড়ের সমস্ত রোলগুলোকে ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

 শেড ব্যান্ড:  শেড ব্যান্ড তৈরি করা

সঠিক তথ্য দিয়ে যোগাযোগ: অধিক পরিমান কাপড় কেনার পর যদি শেড ভেরিয়েশন দেখা যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিভাবে যেমন কাটিং বা প্রোডাকশন শাখায় জানাতে হবে।


ফেব্রিক লেয়ারিং: এক্ষেত্রে কাপড়ের রোলসমুহ তার শেড ব্যান্ড অনুযায়ী আপনাকে ভাগ করতে হবে।


১.কাপড়ের প্যাটার্ন তৈরির সময়ে এমনভাবে মার্ক করুন যাতে শেড ভেরিয়েশনের অংশটি ঢাকা পরে যায়।

২.কাপড়ের লেয়ার গুলোকে নাম্বারিং করা।

৩.ত্রুটিপূর্ণ গার্মেন্টস উপাদান বা কাপড়ের অংশটিকে প্রতিস্থাপন করুন।


Post a Comment

Previous Post Next Post