কোন একটি কাপড়ের টুকরা বা পোশাক ধৌত করার পর এটি সংকুচিত হয়ে এর সাইজ তার আসল সাইজের তুলনায় ছোট হয়ে যায়। কাপড়ের প্রকৃত সাইজের তুলনায় ছোট বা খাটো হয়ে যাওয়ার এই পদ্ধতিকে স্রিংকেজ বলা হয়। টেক্সটাইল জগতে এটি খুব পরিচিত একটি নাম।
টেক্সটাইল ফেব্রিক দিয়ে পোশাক তৈরির সমাপ্ত পর্যায়ে যখন তরল পদার্থ বা তাপ দিয়ে কাপড়টিকে প্রক্রিয়াজাত করা হয় তখন স্রিংকেজের এই ঘটনা ঘটে। কাপড়ের স্রিংকেজ তার দৈর্ঘ বা প্রস্থ উভয় বরাবর হতে পারে।
পোশাক শিল্পে স্রিংকেজের নেতিবাচক প্রভাব থাকে। যদি আপনার তৈরি পোশাকটি বার বার ধৌত করার দ্বারা যখন মুল পোশাকের ২-৩% এর অধিক পরিমানে সংকুচিত হয়ে যাবে তখন এর ব্যবহার উপযোগীতা কমে যাবে।
এজন্য পোশাক তৈরির পূর্বে জেনে নেওয়া ভাল এই অর্থে যে কাপড়টি পূর্বে ধৌত করা হয়েছিল কিনা। যদি পূর্বে ধৌতকৃত কোন কাপড় চাই সেটি ওভেন বা নীট জাতীয় হোক না কেন, সেক্ষেত্রে এটি দিয়ে পোশাক তৈরির পর এর সংকোচন বা খেপে যাওয়ার মাত্রা সীমা অতিক্রম করবে না।
কাপড়ে স্রিংকেজ কেন হয়?
নিম্নলিখিত কারণে আপনার পরিধেয় কাপড় খেপে যেতে পারে-
🔸উইভিং প্রক্রিয়ায় যখন কাপড় বোনা হয় তখন ইয়ার্নগুলোকে টেনে লম্বা করা হয়। এর ফলে ওভেন জাতীয় কাপড়ের বিদ্যমান ইয়ার্নের মাঝে উচ্চ মাত্রার চাপ বা tension তৈরি হয় যা পানি বা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে ইয়ার্ন সংকুচিত হয়ে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায়।
🔸কাপড় উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং – এসব ক্ষেত্রে কাপড়কে টেনে মেশিনের সাথে ফিট করতে হয়। যার ফলে কাপড়ে বিদ্যমান ইয়ার্নের মাঝে চাপ সৃষ্টি হয়।
কাপড়ে সৃষ্ট এই চাপ লাঘবের সুযোগ তখনই তৈরি হয় যখন যখন এটি পানির সঙ্গ লাভ করে। আর তখন এটি সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে যায়।
স্রিংকেজ কত প্রকার কি কি
স্রিংকেজ কয়েক প্রকারের হতে পারে। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে এর প্রকারভেদ তুলে ধরা হলো।
১. প্রসারণ বা (Relaxation) : আগেই বলা হয়েছে যে, ওভেন ফেব্রিক তৈরির সময় তার ইয়ার্নসমুহকে টেনে লম্বা করতে গিয়ে পর্যাপ্ত চাপে ফেলতে হয়। ওয়ার্প এবং ওয়েফ্ট অর্থাৎ কাপড়ের দৈর্ঘ ও প্রস্থ উভয় দিক বরাবর যদিও দৈর্ঘ বরাবর চাপের পরিমান অনেকটা বেশী থাকে। এই চাপ পরবর্তিতে আরোও বৃদ্ধি পায় যখন কাপড়টিকে বাজারজাত করার উপযোগী হিসাবে তৈরির জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ের আরোও কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এর ফলে ফিনিশড কাপড়টি এমন এক অবস্থায় পতিত হয় যাকে ডাইমেনশনাল ইনস্টেবিলিটি বলা হয়।
তবে, ওয়েট প্রসেসিং এর সময় কাপড়ের চাপে থাকা ইয়ার্ন সংকোচনের মাধ্যমে এর স্ট্যাবিলিটি কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হয়। আর এই ধরণের স্রিংকেজ এর নাম হলো রিল্যাক্সেশন স্রিংকেজ।
২. সেইলিং (Sealing)
কোন কোন কাপড়ের ফাইবার পানি শোষণ ফলে ফুলে যেতে পারে আবার পানি বর্জনের ক্ষেত্রে শুকিয়ে যেতে পারে। ওভেন ফেব্রিকের বেলায় এর ইয়ার্নগুলো যদি ঢিলে-ঢালাভাবে একটি আর একটির সাথে বোনা হয় তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
৩. ফেল্টিং(Felting)
কাপড়ে বিদ্যমান ফাইবার এর ফ্রিকশনাল ধর্মের কারণে এ ধরণের স্রিংকেজ তৈরি হতে পারে। উল কাপড়ের উপরিভাগে এই প্রকৃতির স্রিংকেজের ঘটনা অনেক সময় দেখা যায়।
৪. সংকোচন (Contraction)
সাধারণত: সিনথেটিক ইয়ার্ন দিয়ে তৈরি কাপড়ে এই ধরণের স্রিংকেজ হয়ে থাকে যদি কাপড়টিকে ২১০ ডিগ্রীর অধিক তাপমাত্রায় রাখা হয়।
ফ্যাব্রিকের স্রিংকেজ পরিমাপের সূত্রঃ
যে কোনও ফ্যাব্রিকের জন্য স্রিংকেজ টেস্ট করতে নিম্নোক্ত ফ্যাব্রিক স্রিংকেজ সূত্রটি অনুসরণ করুন । ৩ ধাপ অনুসরণ করুন করে প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্যের জন্য আফটার ওয়াস ফ্যাব্রিক স্রিংকেজ নির্ধারণ করতে পারেন।
প্রথম ধাপঃ ফ্যাব্রিক রোল থেকে ফেব্রিকের লেন্থ এবং ডায়া বরাবর ফ্যাব্রিকের উপর একটি 18"x18" স্কয়ার আকৃতির ব্লক ড্র করুন । এটা কনফার্ম করতে হবে আপনার ড্র করা স্কয়ার বক্স যাতে ফেব্রিকের সেলভেজ থেকে কমপক্ষে 2 " দূরে থাকে ।
ফেব্রিক ওয়াস করার আগে 18"x18" করে মার্কিং করে ড্র করতে হবে।
ফেব্রিকের দৈর্ঘ্যের মেজারমেন্ট = 18 "
ফেব্রিকের প্রস্থের মেজারমেন্ট = 18 "
দ্বিতীয় ধাপঃ ফেব্রিক ওয়াশিংয়ের পর স্রিংকেজ % কত তা বের করতে আপনার স্ট্যান্ডার্ড ওয়াশিং পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনাকে ফ্যাব্রিকের স্যাম্পলটি ওয়াস করতে হবে । তারপর ড্রাই করতে হবে । ওয়াসের পর ড্রাই হলে এর দৈর্ঘ প্রস্থ কতোটা কমেছে পরিমাপ করতে হবে । স্রিংকেজ টেস্টের পরে মার্ক করা 18"x18" স্কয়ার ব্লক কে পুনরায় লেন্থ এবং উইডথ মেজারমেন্ট চেক করে দেখতে হবে । এবং তা ক্যাল্কুলেশন এর জন্য লিখে রাখতে হবে ।
ধরা যাক ওয়াস এবং ড্রাইয়ের পর আমাদের ফেব্রিকের,
দৈর্ঘ্যের পরিমাপ = 17 " ইঞ্চি
প্রস্থের পরিমাপ = 15 " ইঞ্চি
তৃতীয় স্টেপ- 3ঃ এখন ফেব্রিকের বিফোর এবং আফটার ফেব্রিকের মেজারমেন্ট চেইঞ্জ অনুযায়ী ফ্যাব্রিক স্রিংকেজ বের করার সূত্রঃ
অর্থাৎ
সংক্ষিপ্ত আকারে বললে হবেঃ
= ( বিফোর লেন্থ - আফটার লেন্থ ) / (বিফোর লেন্থ) × ১০০
= স্রিংকেজ রেজাল্ট %
লেন্থের দিকের মোট স্রিংকেজ % বের করার সূত্রঃ
= [(18 - 17) ÷ 18] x 100
= 5.55%
= 6% ( রেজাল্ট রাউন্ড ফিগার করে )
উইডথের দিকের মোট স্রিংকেজ % বের করার সূত্রঃ
= [ (18 - 15) ÷ 18 ] x 100
= 16.66%
= 17% ( রেজাল্ট রাউন্ড ফিগার করে )